বিরাদরানে ইসলাম,
ভারতবর্ষের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এমারত শরয়ীয়াহর মাধ্যমে আমীরে শরীয়ত নির্বাচন করা ওয়াজিব।
স্বাধীনতার পূর্বে সর্বভারতীয় স্তরে এমারতে শরয়ীয়াহ গঠন করা সম্ভবপর না হওয়ায় ১৯২১ সালে পাটনার পাথর মসজিদে হযরত মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সাহেবের সভাপতিত্বে শতাধিক উলামায়ে কেরাম সহ প্রায় চার হাজার জনতার উপস্থিতিতে হযরত মাওলানা শাহ বদরুদ্দীন ফুলওয়ারি সাহেবকে, বিহার উড়িষ্যার আমীরে শরীয়ত ও হযরত মওলানা আবুল মাহাসীন সাজ্জাদ রহমত উল্লাহ কে নাইবে আমীরে শরীয়ত মনোনীত করা হয়।
১৯৭৪ সালে কর্নাটকে হযরত মাওলানা আবু সউদ আহমদ সাহেবকে আমীরে শরীয়ত নির্বাচন করা হয়।১৯৭৬ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক তথা বিহার উড়িষ্যার আমীরে শরীয়ত হযরত মাওলানা মিন্নতুল্লা রহমানী সাহেবের সভাপতিত্বে আহলে হল্ব ও আক্বদ সহ প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে হযরত মাওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরী কে উত্তর পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের আমীরে শরীয়ত নির্বাচন করা হয়।১৯৮৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রথম আমীরে শরীয়ত হযরত মাওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরী রহমাতুল্লাহি সাহেবের ইন্তেকালের পর তার কাফন দাফনের পূর্বে আরবাবে আহলে হল্ব ও আক্বদের সভায় হযরত আল্লামা তৈয়ীবুর রহমান বড়ভূঁইয়া সাহেবকে সর্বসম্মতিক্রমে উত্তর পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় আমীরে শরীয়ত নির্বাচন করা হয় ও তারই ইমামতিতে প্রথম আমীরে শরীয়ত এর কাফন দাফনের কাজ সম্পন্ন করা হয় ।অতঃপর সমগ্র উত্তর পূর্ব ভারতের সর্বত্র স্বত:স্ফুত ভাবে মানুষ তাকে মান্য করে তার হাতে এমারতের বয়াত করেন সর্বভারতীয় স্তরে হযরত আল্লামা তৈয়ীবুর রহমান বড়ভূঁইয়া সাহেব উত্তর পূর্ব ভারতের আমীরে শরীয়ত হিসাবে সর্বজন বিদিত ও স্বীকৃত।
১৯৮৩ সালে হযরত মাওলানা হামিদ উদ্দিন আক্বিল হুচছামীকে অন্ধ্রপ্রদেশের আমির করা হয়। যে সকল রাজ্য এমারত শরিয়াহ প্রতিষ্ঠিত হয় নাই ,সে সকল রাজ্যে কাজীয়ে শরীয়ত নিয়োগের জন্য সর্বভারতীয় মুসলিম পার্সোনাল লো বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উত্তর-পূর্ব ভারতে শরীয়ত সম্মত ভাবে প্রতিষ্ঠিত এমারতে শরয়ীয়াহ ও নির্বাচিত আমীরে শরীয়ত বিদ্যমান থাকা অবস্থায় ১৯৯০ সালের ২০ জানুয়ারী মৈরাবাড়িতে জমিয়ত সভাপতি হযরত মাওলানা আছাদ মাদানী সাহেব শরীয়তের বিধানের তোয়াক্কা না করে পাল্টা আমীরে শরীয়ত নিয়োগ করেন, যা পবিত্র শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও নাজায়েজ। আমীরে শরীয়ত নির্বাচন করা কাহারো স্বীকৃতি ও অনুমোদনের উপর নির্ভর করে না বরং ইহা ওই এলাকার আহলে হল্ব ও আক্বদের দায়িত্ব। উত্তর-পূর্ব ভারতে শরীয়ত সম্মতভাবে নির্বাচিত আমীরে শরীয়ত থাকা সত্ত্বেও পাল্টা আমীরে শরীয়ত নির্বাচনের বিরোধিতা করে লেখা পশ্চিমবঙ্গ জমিয়তের সভাপতি হযরত মাওলানা তাহির সাহেবের ৪ জানুয়ারি ১৯৯০ ইংরেজির পত্র এবং মৌলানা সদরুদ্দিন আনসারী সাহেবের প্রতিবাদের কথা ভিত্তিহীন বলে বরাক উপত্যকার তিন জেলা জমিয়তের সভাপতিদের ৫ জানুয়ারি ২০১০ ইংরেজির স্বাক্ষরিত আবেদন পত্র বিলি করা হয়েছে, তা মিথ্যা অপপ্রচার। কেননা মরহুম তাহির সাহেবের চিঠির প্রতিলিপি আমাদের হাতে রয়েছে। হযরত মাওলানা সদরুদ্দিন আনসারী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ এহেন শরীয়ত বিরোধী কাজের প্রতিবাদ পূর্বক এহেন জমিয়তের সংঙ্গ ত্যাগ করে জমিয়ত নামক সর্বভারতীয় সংস্থা গঠন করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, যে ভারতের যে সকল রাজ্যে এখনো এমারত প্রতিষ্ঠিত হয় নাই সেসব রাজ্যে এমারত প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে যেখানে শরীয়ত সম্মতভাবে এমারত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানে পাল্টা এমারত প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য জনগণকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কি হতে পারে? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ১৯৭৬ সালে মরহুম মাওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরী সাহেবকে উত্তর পূর্ব ভারতের আমীরে শরীয়ত নির্বাচন করা হয়, তখন জমিয়ত নেতৃত্ব “আমীরে শরীয়ত “এর অপব্যাখ্যা করে পাল্টা সরকার গঠন করা হয়েছে বলে আসাম সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অভিযোগ করেন। যে অভিযোগের পরিপেক্ষিতে নগাঁও জেলার মুড়াঝারে ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত এমারত শরয়ীয়াহর কনফারেন্স এর বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা বলবৎ করা হয় ।তারপর এই বিষয় নিয়ে তৎকালীন আসামের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শরৎচন্দ্র সিনহা এমারতে শরয়ীয়াহ কর্তৃপক্ষ ও জমিয়ত কর্তৃপক্ষকে আহ্বান করে দিসপুর জনতা ভবনে বৈঠক ডাকেন। এই বৈঠকে এমারত শরয়ীয়াহর পক্ষ থেকে মওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরী ,আমীরে শরীয়ত ,উত্তর পূর্ব ভারত সহ মরহুম আমীরে শরীয়ত হযরত আল্লামা তৈয়ীবুর রহমান বড়ভুঞা সাহেব ,মরহুম মৌলানা নঈম উদ্দিন সাহেব, মৌলানা নাসির উদ্দিন চৌধুরী সাহেব উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অপরপক্ষ জমিয়ত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হন নি । তাছাড়া ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জনাব ফখরুদ্দিন আলী আহমেদের নিকট জমিয়ত নেতৃবৃন্দ পুনরায় একই অভিযোগ উত্থাপন করেন।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি উভয়পক্ষকে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে ডাকেন। এই আহবানে সাড়া দিয়ে উত্তর পূর্ব ভারতের প্রথম আমীরে শরীয়ত মৌলানা মরহুম আব্দুল জলিল চৌধুরী সাহেব নির্ভীকভাবে রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে হাজির হন, কিন্তু অভিযোগকারী জমিয়ত নেতারা সম্মুখে হাজির হওয়ার সাহস করতে পারেন নাই ।রাষ্ট্রপতি মহোদয় দ্বিতীয়বার উভয়পক্ষকে আহ্বান জানালেও অভিযোগকারীরা দ্বিতীয়বারও অনুপস্থিত থাকেন। অতঃপর রাষ্ট্রপতি জনাব ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ মওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরীর এর নিকট থেকে যাবতীয় বিষয় অবগত হয়ে নির্ভীকভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।
সর্বভারতীয়” মুসলিম পার্সোনাল লো বোর্ড” ভারতের সকল মুসলিম সংস্থার এক ঐক্য মঞ্চ। সুন্নি ,শিয়া ,দেওবন্দী বেরলওয়ী, আহলে হাদিস,নদওয়া, জমিয়ত, জামাতে ইসলামী প্রভৃতি সংস্থার নেতৃবর্গ পার্সোনাল লো বোর্ডের কার্যকরী কমিটির সদস্য। পার্সোনাল লো বোর্ডের সভা কার্যবিবরণী প্রচারে জাতীয় স্তরের প্রচার মাধ্যম হযরত মাওলানা আছাদ মাদানী সাহেবকে আমীরে হিন্দ পরিচয় না দিয়ে জমিয়ত উলামার সভাপতি হিসেবে পরিচয় প্রদান করে। ঐ একই সভায় উপস্থিত আল্লামা তৈয়ীবুর রহমান বড়ভুঞা সাহেবের নামের সঙ্গে আমীরে শরীয়ত আসাম উল্লেখ করে পরিচয় প্রদানের অজস্র উদাহরণ বিদ্যমান আছে।